ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ ইন্দো ভার্সন মোটরসাইকেল রিভিউ - সাখাওয়াত হোসেন

হোন্ডা এইচএস ১০০, এই বাইকটি দিয়ে আমার জীবনে বাইক চালানোর সূচনা হয়। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে আমি হোন্ডা এইচএস ১০০ দিয়ে বাইক চালানো শিখি। বাইক ব্যবহার করা বলতে গেলে আমার এক ধরণের নেশা কারণ এ যাবত বাংলাদেশে যতগুলো বাইক এসেছে তার সবটাই আমার চালানো আছে আর নিজের বাইক বলতে গেলে অনেক বাইক ছিলো যেমন- ডিস্কোভার ১৩৫ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যত ভালো ভালো বাইক ছিলো তার সবটাই আমার স্বাদ নেওয়া আছে। আমি এখন ব্যবহার করছি ইয়ামাহা আর১৫ ভার্সন ৩ (ইন্দো)। এই বাইকটির ভালো মন্দ কিছু বিষয় নিয়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।



আমি মোঃ সাখাওয়াত হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। দীর্ঘ ২ মাস যাবত আমি ব্যবহার করছি ইয়ামাহা আর১৫ ভার্সন ৩। এই বাইকটা কেনার মুল কারণ ছিলো যে এর ডিজাইনটা। এত সুন্দর দানবীয় লুক আর হ্লুদের সাথে কালো রঙ্গয়ের সংমিশ্রণ দেখে আমার খুব ভালো লেগে যায়। প্রথমে ইচ্ছা ছিলো হোন্ডা সিবিআর রেপসল কিনার কিন্তু এই বাইকটা দেখে আর নজর সড়াতে পারিনি। আর আমার এই বাইকটা কেনার জন্য অনেক আগে থেকেই অনেক শখ ছিলো। তো সব মিলিয়ে বলা যায় যে বাইকটা আমার শখের জন্য আর বেশি পছন্দ হওয়ার জন্য কেনা।

ডিজাইন
ডিজাইনটা আগের আরওয়ানফাইভ গুলোর থেকে একটু ব্যাতিক্রম কারণ সামনের এলইডি হেডল্যাম্প এবং মোটা কিট এর ডিজাইনটাকে একটু ব্যাতিক্রম করেছে। এছাড়াও বাইকের কালার কম্বিনেশন,আউটলুক, মোটা টায়ার সব কিছু মিলিয়ে খুব সুন্দর ডিজাইন দিয়েছে কিন্তু একটা বিষয় আমি ইয়ামাহাকে বলতে যাই যে এর হেডল্যাম্পটা যদি আরেকটু বড় করা যেত তাহলে আমার মনে হয় ডিজাইনের দিক দিয়ে আরও সুন্দর লাগত।

গঠন
ইয়ামাহা আমার জানা মতে তাদের প্রত্যেকটা বাইকের সাথে মজবুত পার্টস দিয়ে থাকে আর এই বাইকের দান অনুযায়ী আমার কাছে মনে হয়েছে যে সকল পার্টস যথেষ্ট মজবুত । বিল্ড কোয়ালিটি এখন পর্যন্ত ভালো মনে হয়েছে আশা করছি ভবিষ্যতেও ভালো হবে।

ইঞ্জিন
শুরু থেকেই ইঞ্জিন অনেক ফ্রি। ইঞ্জিন যত চালাই ততবেশি স্মুথ হয় । আর ইঞ্জিনের শক্তি অনেক বেশি। রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হলেও মন চায় যে বাইক নিয়ে অনেক বেশি গতিতে ছুটি। এক্সজস্ট শব্দটা আমার খুব পছন্দ পাশপাশি ইঞ্জিনের শব্দটাও। এই দুইটা মিলিয়ে আমি ইঞ্জিনের গম্ভীর একটা শব্দ অনুভব করতে পারি। কোম্পানী থেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলো যে ইঞ্জিনটা সব সময় সক্রিয় রাখতে তা না হলে নাকি পরবর্তীতে সঠিক গতি পাওয়া যাবে না। আমি চেষ্টা করি ইঞ্জিনটা সক্রিয় রাখার জন্য। ইঞ্জিনের খারাপ কোন বিষয় আমার এখন লক্ষ্য হয়নি। আমি টপ স্পীড তুলেছি প্রায় ১৩৫ কিমি প্রতি ঘন্টায়।

সিটিং পজিশন
বাইকের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে কিন্তু এর সিটিং পজিশনটা দেখে আমার কোন দুর্বলতা আসে নি কারণ সিটিং পজিশনটা আমার একদমই পছন্দ না। পিলিয়নের সিট একদমই আরামদায়ক না বিশেষ করে মহিলা মানুষের জন্য খুব কষ্টদায়ক এই পিলিয়ন সিট। আমি একদিনে প্রায় ৩০০ কিমি রাইড করেছি। সেক্ষেত্রে আমার কোন ব্যাক পেইন হয়নি কিন্তু কব্জি ব্যথা হয়েছে এর মুল কারণ অনেক হেলে রাইড করতে হয় যা আমার জন্য একটু কষ্টদায়ক বটে। আমি কোম্পানীর কাছে পরামর্শ দিবো যে রাইডিং সিট এবং পিলিয়ন সিট ম্যাচিং করতে এবং তা অবশ্যই ডিজাইনটা সুন্দর রেখে ম্যাচিং করতে হবে। আর সিটের উচ্চতা একটু বেশি রাখা হয়েছে মূলত এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি করার জন্য।

হ্যান্ডেলবার
সিটিং পজিশনের সাথে হ্যান্ডেলবারের কম্বিনেশনটা আমার জন্য খুব একটা আরামদায়ক না। হ্যান্ডেলবারটা অনেক হেলানো যার ফলে একটু হেলে রাইড করতে হয় এবং ৩০ কিমি চালানোর পড়ে কব্জিতে ব্যথা অনুভব হয়। হ্যান্ডেলবারটা আরেকটু উঁচু করলে ভালো হবে।

ইলেকট্রিক্যাল
মিটার কনসোল, এলিডি টেলল্যাম্প,সাইড ইনডিকেটর সব কিছু দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু হেডল্যাম্পের আলোটা পর্যাপ্ত না বিশেষ করে বাংলাদেশের রাস্তায় জন্য এই রকম হেডল্যাম্প একদমই প্রযোজ্য না। আর হেডল্যাম্প সব সময় জ্বলে থাকে যেটা দূর থেকে দেখতে ভালো লাগলেও আমার কাছে একটু বিরক্ত মনে হয়। আর মিটার কনসোলটা রেডিয়াম করলে বেস্ট হইতো।

ব্রেকিং
ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ে আমার কোন আপত্তি নাই কারণ ইয়ামাহার ব্রেকিং সিস্টেম বর্তমান বাজারে বেস্ট ব্রেকিং সিস্টেম বলে আমি মনে করি। এই বাইকের সামনের এবং পেছনের দুইটা ডিস্ক ব্রেক খুব ভালো ভাবে কাজ করে।

সাসপেনশন
সাসপেনশন আমাকে স্মুথ রাইডিং দেয়। ভাংগা রাস্তা কিংবা হাইওয়েতে চাপ কমিয়ে অনেক সুন্দর রাইড নিশ্চিত করে। সামনের আপসাইড ডাউন সাসপেনশনের ফলে এর পারফরমেন্স অনেক ভাল হয়।

টায়ার
টায়ারগুলো দেখতে অনেক মোটা মোটা লাগে অর্থাৎ সাধারণ যে কোন বাইকের একই সাইজের টায়ারের থেকে মোটা মনে হয়। আমি টায়ারের গ্রিপ সামনের এবং পেছনের দুটারই খুব ভালো পেয়েছি কিন্তু আমার কাছে পেছনের টায়ারটা একটু স্কীড করে কেন জানি না। আরেকটি বিষয় সেটি হচ্ছে যে এত দামী বাইকের সাথে টায়ার গার্ড নাই কেন । বৃষ্টির দিন পিলিয়নের মাথা পর্যন্ত পানি উপড়ে এসে পড়ে এটা মোটেই কাম্য নয়। এরপর থেকে বাইকের সাথে টায়ার গার্ড দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

মাইলেজ
ইঞ্জিনের ভালো পারফরমেন্সের পাশপাশি আমি এখন মাইলেজ পাচ্ছি লিটারে প্রায় ৪০ কিমি এর বেশি। আমাকে শো-রুম থেকে বলা হয়েছিলো যে মাইলেজ ৪৫ পাওয়া যাবে। আমি মাইলেজ নিয়ে অত্যান্ত খুশি কারণ এত বড় একটা বাইক , এত শক্তিশালী একটি ইঞ্জিন নিয়ে অনেক ভালো মাইলেজ সরবরাহ করে।

সার্ভিস সেন্টার
আমি রাজশাহীর কে আর বাইক সেন্টার থেকে বাইকটি কিনেছি এবং তাদের থেকেই সার্ভিস করিয়ে নিই। আমি এই পর্যন্ত একবার সার্ভিসিং এ গিয়েছি তাদের সার্ভিস মান ,ব্যবহার ইত্যাদি আমার কাছে খুব ভালো বলে মনে হয়েছে।

দাম
আপনি যদি ব্যাতিক্রম কোন কিছু নিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বেশি দাম দিয়ে নিতে হবে। এই বাইকটার দাম বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এবং এর ফিচারস ও অন্যান্য সব কিছু মিলিয়ে দাম ঠিকই বলে মনে হয়েছে।

বাইকের কিছু খারাপ দিক যা আমার কাছে মনে হয়েছে
-সিটিং পজিশন পিলিয়ন এবং রাইডার দুটাই আরামদায়ক না
-টায়ার গার্ড নেই
-হেডল্যাম্প সর্বদা জ্বলে থাকে এটার বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।

কোম্পানীর কাছে অনুরোধ থাকবে যে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা।

All bike price in bd