লিফান কেপিআর ১৬৫আর ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ৩৫০০কিমি রাযী

২০০৫ সাল থেকে আমি বাইক চালানো শুরু করেছি। যাত্রা শুরু হয়েছিল ৫০ সিসি মোটরসাইকেল দিয়ে এবং আমি এখন লিফান কেপিআর ১৬৫  কার্বুরেটর ভার্শনটি ব্যবহার করছি। ২০১৪  সালে আমি হিরো আই-স্মার্ট কিনেছিলাম এবং আমি এখনও আমার কাছে বাইকটি আছে,  কিন্তু কয়েক বছর আগে একটি বাইক আমার চোখ কেড়েছিল এবং সেটি ছিল লিফান কেপিআর। আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছিলাম এবং আমাদের মধ্যে একজন লাল রঙের লিফান কেপিআর নিয়ে এসেছিল। সেদিন আমি বাইকটি দেখে এবং পরবর্তিতে চালিয়ে এর পারফর্মেন্সে সত্যিই সন্তুষ্ট হয়ে পড়ি। সেদিন ১০০ কিলোমিটারের প্রায় বেশি সময় বাইকটি চালিয়ে আমি বুঝতে পারলাম এই বাইকটি আসলেই একটি মাস্টার পিস এবং আমার বাইকটি কেনা উচিত। আমি অনেক দিন ধরেই একটি বাইক কেনার কথা ভাবছিলাম এবং আমি লিফান কেপিআর কিনতে মনস্থির করলাম শেষমেশ। আমার কিছু ব্যক্তিগত কারণে বেশকিছুদিন  অপেক্ষা করতে হয়েছে, কিন্তু অবশেষে আমি ফেব্রুয়ারী মাসে নিজের লিফান কেপিআর ১৬৫ বাইকটি কিনে ফেলি। গত ৬ মাস ধরে আমি এই বাইকটি ব্যবহার করছি এবং এখন পর্যন্ত বাইকটি ৩৫০০ কিলোমিটারে পৌছে গেছে। আজ আপনাদের সাথে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যাচ্ছি।

শুরু করার আগে বলি রাখি, আমি সত্যিই লিফানের একজন বড় ভক্ত এবং আমার কাছে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ নেই। লিফান সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা খুবই প্রশংসনীয়।

শুরুতেই লিফান কেপিআর ১৬৫ এ য়ামার দেখা কিছু ত্রুটির কথা বলি,

- আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমি মনে করি এই বাইকের ইঞ্জিন সত্যিই অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। অতিরিক্ত সময় ট্রাফিকে আটকা পড়লে অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য রাইড করলে গরমের কারণে বিরক্তিকর হয়ে যায়।
- বাইকের কালারের গুনগত মান ভাল নয়। আমি মনে করি আমার আইস্মার্টেও এখন কালার ঠিক আছে, কিন্তু আমার লিফানে তা নেই। আমি আসল কালার বাঁচাতে সিরামিক কোটিং করেছি। এমনিতেই বাইকে খুব তাড়াতাড়ি স্ক্র্যাচ ধরে।
- ক্লাচ লিভার বেশ শক্ত। আমি এটিকে নরম করার চেষ্টা করেছি, কারণ এটি ব্যবহার করার সময় আমি আমার হাতের তালুতে খুব তীব্র ব্যথা অনুভব করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি এখনও কোন সমাধান পাইনি।


লিফান কেপিআর ১৬৫ এ আমার দেখা ভাল দিকগুলো

- চমৎকার থ্রোটল রেসপন্স। আমাকে ওভারটেকিং, বা প্রয়োজনীয় গতি পেতে চিন্তা করতে হয়না।
- শক্তিশালী ইঞ্জিন। আমি পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ করেছি, আমি কখনই পাওয়ারের কমতি অনুভব করিনি, এমনকি শহরের রাস্তাতেও বাইকের ইঞ্জিন পারফেক্ট।
- লিফান কেপিআর ১৬৫ সত্যিই একটি আরামদায়ক বাইক, পিলিয়ন এবং রাইডার উভয়ের জন্যই। সাসপেনশনের কারণে আমি কখনো কোন অস্বস্তি বোধ করিনি, এমনকি আমি পিলিয়ন হিসাবে অনেক দূর পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি, আমিও খুব আরামেই ছিলাম।
- লিফান কেপিআর ১৬৫ এর স্টক হেডল্যাম্প প্রজেকশন, এবং সেই কারণে রাতের ভ্রমণও বেশ আরামদায়ক হয়ে ওঠে। আমি কখনোই মনে করি না যে আমার রাতের ভ্রমণের জন্য অতিরিক্ত আলো দরকার। তাই এখনও কোন এক্সট্রা লাইট লাগাতে হয়নি।
- সাসপেনশন এবং টায়ারের পারফুরমেন্স বেশ ভাল।

এগুলো ছিল আমার লিফান কেপিআর ১৬৫ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এখন চলুন আমার শহর এবং দীর্ঘ যাত্রার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

আমি আমার অফিসের উদ্দেশ্যে এবং দৈনন্দিন চলাচলে নিয়মিত ঢাকা শহরে লিফান নিয়ে ভ্রমণ করি। আমার দৃষ্টিতে এই বাইকের একটি মাত্র সমস্যা আছে এবং তা হল মাইলেজ। আমি কখনই মাইলেজের কথা ভাবি না কারণ আমি জানতাম যে এই বাইকটি কম মাইলেজ দেয়। আমি শহরের রাস্তায় ৩০-৩২  KM/L মাইলেজ পাই, অন্যান্য সবকিছুই একদম পারফেক্ট। কমফোর্ট, কনট্রোলিং এবং হ্যান্ডলিংয়ে কোন সমস্যা নেই। অন্যদিকে, যদি আমি লং রাইডের কথা বলি, আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। আমি একদিনে ৩৫০ কিলোমিটারেরও বেশি এবং সবমিল্যে একটি লং রাইডে মোট ৮০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছি। সেই যাত্রায় আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট ছিলাম, একজন রাইডার এবং পিলিয়ন উভয় হিসেবেই। পাহাড়ি পথে ইঞ্জিনের শক্তির কোন অভাব ফিল করি নাই। অস্বস্তিরও কিছু ছিল না। এমনকি লং রাইডে এই বাইক ৩৫ KM/L এর বেশি মাইলেজ দেয়।

যদি আমি স্পীডের কথা উল্লেখ করি  একবার আমি হাই স্পীড টেস্ট করার চেষ্টা করেছি এবং পিলিয়নের সাথে ১২০ পর্যন্ত স্পীড তুলেছিলাম। তবে স্পীড আরো তোলা যেত। অন্যদিকে ১০০/১১০  পর্যন্ত এই বাইকের গতি তুলতে কব্জির মোচড় ছাড়া আর কিছুই করা লাগে না।

সবমিলিয়ে আমি লিফান কেপিআর ১৬৫ কে দশের মধ্যে আট দিচ্ছি, এবং আমি মনে করি যদি মাইলেজ এর চেয়ে ভাল হয় তবে বাইকটি তার নিজস্ব সেগমেন্টে এবং এই দামের মধ্যে বেশ ভাল একটি বাইক।অন্য কোন চাইনিজ বাইকের এই ধরনের পারফরম্যান্স দেখা যায় না, যা লিফান কেপিআর ১৬৫ দেয়। এমনকি এই বাইকের দামও খুব গ্রহণযোগ্য সকলের জন্য।

মূল্যবান সময় ব্যয় করে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 165R Carburetor