হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০আর ২০০০কিমি রাইডিং অভিজ্ঞতা রিভিউ - আসিফ রেজা

হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০আর বাইকটি আমি প্রথম দেখেছিলাম ইন্ডিয়ান ওয়েব সাইটে। বাইকটির স্পেসিফিকেশন দেখে আমার ভালো লাগে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তখন আমাদের দেশে সিসি লিমিট থাকার কারণে দেশে আসতে পারেনি।১৬০ সিসি সেগমেন্টের মধ্যে মার্জিত একটি বাইক হিসেবে আমি হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০ কেই মনে করি। এই বাইক নিয়ে কিছু ভালো মন্দ দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করবো তার আগে আমি আমার বাইক রাইডিং নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।



আমি আমার জীবন প্রথম বাইক চালানো শিখি হোন্ডা সিজি ১২৫বাইক দিয়ে। সেই বাইকটি আমার বাবা ব্যবহার করত। একদিন নিজ ইচ্ছায় বাইকটি নিয়ে বের হলাম নিজেই চালানো শিখবো এই উদ্দেশ্যে এবং আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আমি নিজেই হোন্ডা সিজি ১২৫ বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখি। তারপর থেকে হোন্ডা সিজি ১২ নিয়ে আমার দাপিয়ে বেড়ানো। একটু সময় পেলেই ছুটে চলি জাপানিজ হোন্ডা সিজি ১২৫ নিয়ে। সেই বাইকটি প্রায় ১ লক্ষ কিমি এর বেশি চলেছিলো কিন্তু ইঞ্জিনে একদম নতুনের মতই গম্ভীর শব্দ ছিলো। বাইকটি প্রায় ৫ বছর ব্যবহার করার পর আমার বাবা সেটা বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয় । একটা ব্যাক্তিগত কারণ থেকেই বিক্রির সিদ্ধান্তটা আসে কিন্তু আমার ও বাবার মন ছিলো না বিক্রির জন্য কারণ দুই জনেরই প্রিয় বাইক ছিলো সেটি। অবশেষে বাইকটি বিক্রয় করা হল। বাইক বিক্রি করার পর প্রায় ৪ বছর ব্যাক্তিগত কোন বাইক ছিলো না। এই সময়ের মধ্যে বাইকের অভাব বুঝতে পারতাম।




মোটরসাইকেলভ্যালী তে কন্টেন্ট ডেভেলপার হিসেবে যোগদান করার পর আমাকে একটি বাইক দেওয়া হয় সেটি ছিলো ডায়াং বুলেট। ডায়াং বুলেট একদম বুলেটের মতই পারফরমেন্স দিতো। ১০০ সিসির এই বাইকের টপ স্পীড তুলেছিলাম ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা। এই বাইক নিয়ে আমি অফিস ও ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেরিয়েছি । একদিনে ২০০ কিমি এর রাইড করেছি ১০০ সিসির এই বাইক দিয়ে। মোট কথায় ডায়াং বুলেটের পারফরমেন্স আমাকে মুগ্ধ করেছে।

বাংলাদেশের ১৬৫ সিসি অনুমতি প্রদানের পর বাজাজ পালসার এনএস ১৬০ , হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০ আর এবং টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ১৬০ বাজারে আসে । টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ১৬০ আগেই পছন্দের লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছি কারণ পূর্বের আরটিআর ১৫০ এর সাথে ১৬০ সিসির হুবহু মিল আছে। এদিকে বাজাজ পালসার এন এস ১৬০ ও সিবি হরনেট এই দুইটা বাইকের মধ্যে সিবি হরনেট পছন্দের তালিকায় বেশি এগিয়ে ছিলো । কারণ হোন্ডার প্রতি দুর্বলতা শৈশবকাল থেকেই ছিলো আর যে ব্রান্ডের বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখেছি তাকে তো আর অবহেলা করা যায় না। এনএস বাইকটা আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমার বডি গঠনের সাথে মানানসই না আবার ওয়েল কুল্ড ইঞ্জিন ও পেরিমিটার ফ্রেম থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ফিচারস বাকি থেকে গেছে যা সিবি হরনেট আমাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে যেমন মোটা চাকা,বড় ডিস্ক প্লেট, মার্জিত সিটিং পজিশন ও গঠন। সব মিলিয়ে আমি ঠিক করে ফেলি হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০আর।

লুকিং
হোন্ডা সিবি হরনেট এর লুক আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে । বাইকটিতে লুকের দিক থেকে আমার কাছে অনেক মার্জিত মনে হয় ।অন্যান্য নেকেড বাইকের মত এই বাইকের লুকের দিকে তেমন চাকচিক্য নেই কিন্তু যা আছে যথেষ্ট। এদিকে পেছনের লুক আমার কাছে অন্যান্য বাইকের থেকে অনেক বেশি ভালো লেগেছে কারণ এর পেছনে রয়েছে এক্স শেপড এলইডি টেল ল্যাম্প যা বাইকের লুক আরও আকর্ষণীয় করেছে। সামনে পেছনে ও সাইড থেকে বাইকটি দেখতে আমার কাছে বেশ ভালোই লাগে। এর পাইলট শেপ হেডল্যাম্প এর পারকিং লাইটে দুইটা এলিডি বাল্ব ব্যবহার করেছি যা ইগনিশন অন করার সাথে সাথে সামনের দিক থেকে দেখতে আরও সুন্দর লাগে।

ইঞ্জিন
অনেকেই মনে করেন যে হোন্ডা খুব নিম্ন মানের এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন দিয়ে হরনেট নিয়ে এসেছে কিন্তু এই ধারণা একদমই ভুল। ইঞ্জিনের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে কিন্তু লিকুয়িড কূল বা ওয়েল কুল্ড ইঞ্জিনের সুবিধা এয়ার কুল্ড ইঞ্জিনে পাওয়া যায় না তবে লক্ষ্য করেছি যে বাইকের ইঞ্জিন যত গরম হয় ততবেশি স্মুথনেস আর পারফরেন্স পাওয়া যায় তবে লং রাইডে গেলে ইঞ্জিনটাকে একটু সময় দিতে হয় ঠান্ডা হওয়ার জন্য। ইঞ্জিনের আরেকটি বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে তা হল এর হাই ইন্ড টর্ক অর্থাৎ ৬ হাজার আরপিএম ক্রস করার পর ইঞ্জিনের পারফরমেন্স আরও বৃদ্ধি পায় এবং ইঞ্জিন গর্জন শুরু করে। নতুন অবস্থায় ট্যাপেড একটু লুজ আছে সার্ভিস সেন্টার থেকে বলেছে ৪ হাজার পর সেটা এডজাস্ট করে দিবে। ইঞ্জিনের মেজর কোন সমস্যা এখনও লক্ষ্য করিনি।

সিটিং পজিশন
সিটিং পজিশন আমার জন্য পারফেক্ট আছে। একদিনে ১২০ কিমি রাইড করে কোন ক্লান্তি বা ব্যাক পেইন অনুভব করিনি। এদিকে সামনের সাসপেনশনের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট হয়েছি কিন্তু পেছনের সাসপেনশন একটু শক্ত মনে হয়েছে কিন্তু সেটা আমি এডজাস্ট করে নিয়েছি। আপনারা হয়তো সবাই জানেন যে সিবি হরনেট এর পেছনের সাসপেনশন ৩টা স্টেপে এডজাস্ট করা যায়।

ব্রেকিং ও টায়ার
ব্রেকিং সিস্টেম আমাকে মুগ্ধ করেছে। দুইবার পিলিয়ন নিয়ে বাহনের সামনা সামনি হয়েছিলাম কিন্তু এর দুর্দান্ত ব্রেকিং সিস্টেম আমাকে বাচিয়ে দিয়েছে। বাইকের স্পীডের সাথে ব্রেকিং এর পারফেক্ট সামঞ্জস্য রয়েছে। টায়ারের দিক থেকেও হতাশ হয়নি । এমআরএফ ব্রান্ডের টায়ার থাকার ফলে গ্রিপ খুব ভালো হয় এবং করনারিং স্টাবিলিটি অনেক ভালো বোধ করি।

মাইলেজ
নতুন বাইক হিসেবে মাইলেজটা ঠিক সেভাবে পরিমাপ করে দেখিনি তবে ১৬০ সিসি ইঞ্জিন হওয়া সত্ত্বেও এর সাথে সংযুক্ত এইচইটি ( হোন্ডা ইকো প্রযুক্তি) থাকার ফলে মাইলেজ খুব ভালো পাচ্ছি এবং ইঞ্জিনের ভাইব্রেশনও অনেক কম।

ভাল দিক
-বাইকের ডিজাইন ও গঠনের মধ্যে মাস্কুলার একটা অনুভুতি রয়েছে
-সিটিং পজিশন আপরাইট হওয়ার ফলে লম্বা রাইডে কোন সমস্যা হবে না।
-ব্রেকিং সিস্টেম আমাকে মুগ্ধ করেছে
-ইঞ্জিনের শক্তি যথেষ্ট ভালো এবং অনেক স্মুথ ইঞ্জিন যা ৬ হাজার আরপিএম পর্যন্ত কোন ভাইব্রেশন থাকে না।
-করনারিং স্টাবিলিটি অনেক ভালো
-টপ আরপিএম এ ইঞ্জিনের গর্জন শুনতে বেশ ভালো লাগে
-বাইক কেনার পর থেকে বৃষ্টিতে ভিজছে কিন্তু ইলেকট্রিক্যাল বা অন্যান্য দিকে কোন সমস্যা হয়নি।
-বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড খুবই রেসপনসিভ এবং তাদের বাইকের পার্টস যে কোন শো রুমে সুলভমুল্যে পাওয়া যায় যেটা পূর্বে ছিলো না

মন্দ দিক
-বডি প্লাস্টিকগুলো ভালো আছে কিন্তু একটু বেশি ফাপা মনে হয় কারণ যখন হাই আরপিএম এ রাইড করি তখন ফুয়েল ট্যাংকার থেকে একটা গোংড়ানো শব্দ হয়
-হেডল্যাম্পের আলো বিস্তার করে ঠিকই কিন্তু আলোটা পর্যাপ্ত না।
-স্টক হর্ন একদমই ভালো না
-গ্রাব রেল এর রং উঠে যায় । এখানে রাবার জাতীয় কিছু ব্যবহার করা উচিত যেটা তারা অন্যান্য বাইকের করে । যেমন – সিবি সাইন, লিভো ইত্যাদি
-শাড়ী গার্ডটার ডিজাইনের পরিবর্তন আনা উচিত এবং এটা খুবই দুর্বল

আমি কেআর বাইক সেন্টার থেকে গত ৩ই জুলাই বাইকটা কিনেছি। তাদের শোরুমের সকল কর্মকর্তা সাথে আমার ভালো বোঝাপড়া আছে এবং যে কোন সমস্যা নিয়ে গেলে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় না যা ব্যবসায়ের একটা ভালো গুন।

এই ছিলো আমার সিবি ভীমরুল নিয়ে স্বল্প অভিজ্ঞতা। আশা করছি ১০ হাজার কিলো মিটার পর আসল রিভিঊ প্রকাশ করতে পারবো।

All HONDA bike price in bd

Honda CB Hornet 160R SD