টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৬০ মোটরসাইকেল রিভিউ - দুলাল হোসেন

আমার পরিচয় আমি মোঃ দুলাল হোসেন। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি গ্রামে বাস করি। গ্রামের মানুষ সব সময় চায় কম মাইলেজের সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল। অর্থাৎ অল্প তেলে বেশি যাতায়াত করতে। সে দিক থেকে আমিও একজন গ্রামের মানুষ। কিন্তু আমি মাইলেজের চেয়ে বাইকের পারফরমেন্সকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমি মনে করি তেল বেশি খরচ হলে ইঞ্জিন ভাল থাকে। আমার মোটরসাইকেল এর নাম এপাচি আর টি আর ১৬০ সিসি। সাধারন যাতায়াত ও আমার ব্যবসার কাজে যাতায়াতের জন্যই মূলত আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনি। এই মোটরসাইকেলটি আমি “বিসমিল্লাহ মটরস” বাঘা, রাজশাহীর একটি শোরুম থেকে কিনেছি। এই মোটরসাইকেলটি আমি ৩ মাস আগে কিনেছি। এটি আমার জীবনের ৮ম বাইক। এর আগে আমি বিভিন্ন ব্যান্ডের মোটরসাইকেল ব্যাবহার করেছি। সব গুলো মোটরসাইকেলই বলতে গেলে সখ করেই কিনেছি। আমি ৩ মাসে প্রায় ৩৫০০ কিমি পথ চালিয়েছি। আমি একবার আমার সব বন্ধুরা মিলে বাইক নিয়ে টংঙ্গী বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেই দিন প্রায় ৭০০ কিমি পথ চালিয়েছি। মোটরসাইকেল ভ্রমণ আমার ছোটবেলা থেকেই অনেক প্রিয় ছিল। আমি যেখানেই যাই আমার সংগী হিসেবে আমার বাইকটি কাছেই থাকে। যে কোন বাইক শুধু দেখতে সুন্দর হলেই তাকে ভাল বলা যায় না। তার পারফরমেন্স ভাল হলেই কেবল তাকে ভাল বলা যায়। আমি ৩ মাস মোটরসাইকেলটি চালিয়ে বুঝতে পেরেছি এর পারফরমেন্স অনেক ভাল। অনেক গুলো বাইক দেখে এটাই আমি পছন্দ করে কিনেছি। এটা নতুন বাজারে আশায় আমার খুব ভাল লেগে যায়। আমার আগের বাইকটি আরো আগে বিক্রয় করতে পারলে আমি আরো আগেই এই বাইকটি কিনতাম। যাই হোক, এই ৩ মাসের মধ্যেই আমি এই মোটরসাইকেল এর ভাল ও মন্দ দুই গুণাগুণ বুঝতে পেরেছি। তাই আজ আমি সকলের সামনে আমার এই মোটরসাইকেল এর রিভিউ প্রকাশের জন্য হাজির হয়েছি। আমার এই মতামত থেকে অনেক নতুন বাইক ক্রেতারা উপকৃত হবেন এবং কোম্পানি তাদের ভুলত্রুটি গুলো সংশোধন করতে পারবেন। একটা মোটরসাইকেল কেনার আগে সেই বাইকের পারফরমেন্স সম্পর্কে জেনে বুঝে কিনা উচিৎ বলে মনে করি। জেনে বুঝে কিনলে ঠকার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।



এই বাইকটির ডিজাইন আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। ডিজাইনের কথা বলতে গেলে, হাতের পাচ আঙুল যেমন এক নয় তেমনি সকলের পছন্দ এক হয় না। সকলের রুচিও এক নয়। এজন্য সকলে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন দেখেই মূলত বাইক কিনে। সবাই চায় ভাল ডিজাইনটা দেখে ভাল মোটরসাইকেল কিনতে। তবে বলতে গেলে আমার বাইকের এই ডিজাইনটা বেশ সুন্দর। ডিজাইনটা চোখে ধরার মত। এছাড়া এই বাইকের বডির প্লাস্টিক গুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মজবুত। আমার ধারণা এগুলো অল্প আঘাতে কিছুই হবে না। যদিও এই বাইকটি আমার থেকে কখনো পড়ে যায় নাই। মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একট নির্দিষ্ট গতিতে তুলতে পারি।



এবার আসি ইঞ্জিন বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলতে। আমার এই মোটরসাইকেলটি দীর্ঘক্ষন চললেও ইঞ্জিন ওভার হীট বা গরম হয় না। এর ইঞ্জিন ও তার পারফরমেন্স খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের ভেতরে খারাপ কোন শব্দ শুনতে পাই নাই। তবে ইঞ্জিনের শব্দটা আমার খুব ভাল লাগে। তাই আমি এই বাইকটা একটু বেশিই পছন্দ করি। তবে সিটিং পজিশনটা আমার কাছে আরো বেশি ভাল লেগেছে। কারন দুই বা তিন জন ব্যক্তি খুব সহজেই বসতে পারে। তাই আমি আমার পরিবার নিয়ে এক সাথে যে কোন জায়গায় যেতে পারি। এজন্য আমি একটুও সমস্যা অনুভব করি না। এছাড়া আমি সিটে বসে খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। এর সিটটা প্রথমের দিকে শক্ত মনে হলেও এখন বেশ নরম লাগে। যা আমাকে আরাম এনে দেয়। দীর্ঘক্ষন বাইকে বসে রাইড করলেও আমার খুব একটা সমস্যা হয় না। আমি হাই রোডে সর্বোচ্চ ১১৫ গতিতে তুলেছি। এছাড়া আমি এক দিনে প্রায় ৭০০ কিমি পথ চালিয়েছি। বেশি স্পীডে আমার হাট দুটো হালকা ঝিনঝিন করে। তবে এতে আমি তেমন কোন সমস্যা মনে করি না । কারন আমি সব সময় বেশি স্পিডে বাইক চালাই না। এই বাইকের সুইচ গুলো দেখতেও অনেক ভাল, যা ব্যবহার করতে আমাকে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। এছাড়া হেড লাইট থেকে আমি পর্যাপ্ত আলো পাই, যা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। কেননা, রাতে দিনের মতই পরিষ্কার দেখতে পাই। এ বাইকের লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে আমি সহজেই পিছনের দৃশ্য দেখতে পাই। এছাড়া আমার বাইকের ব্রেকটা অনেক ভাল কাজ করে। যে কোন সময়ে বাইক কন্ট্রোল করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। ডিস্ক ব্রেকটি বেশ মজবুত। এটি অনেক ভাল কাজ করে। বাইকটির হ্যান্ডেরবারটি দেখতে সুন্দর। এটি অনেক আরামদায়ক মনে হয়। এছাড়া বাইকটির সাসপেনশন ভাল হওয়ায় খারাপ রাস্তায় ঝাঁকুনি লাগে না। সবকিছু বিবেচনায় মোটামুটি আরাম আছে। অর্থাৎ এটি একটি আরামদায়ক বাইক।

আমার বাইক সার্ভিসিং করতে দুই দিন সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে তাদের ব্যবহার দেখে আমার ভাল লেগেছে। তাদের অতিথি আপ্যায়ন দেখে আমি মুগ্ধ। তাদের পরিবেশটা অনেক সুন্দর এবং কাজের মানও অনেক ভাল। আমি মোটরসাইকেলটি অল বডি চেক আপ করা ও মবিল পরিবর্তন করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। এক কথায় বলতে গেলে সার্ভিসিং সেন্টারের সব কিছু আমার কাছে অনেক বেশি ভাল লেগেছে।

মাইলেজের কথা বলতে গেলে, শোরুম থেকে বাইকটি কেনার সময় যে মাইলেজের কথা বলেছিল আমি তেমন মাইলেজ পাচ্ছি না। তারা বলেছিল এক লিটারে ৫০ কিমি চলা যাবে। কিন্তু আমি ৪৩ কিমির মত মাইলেজ পাই। তবে মাইলেজ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি সব সময় তেলের ট্যাংকার পূর্ণ করে রাখি। এছাড়া এই বাইকটির পারফরমেন্স বিবেচনায় দামটা আমার কাছে সঠিক আছে বলে মনে হয়েছে। যারা দ্রুত যাতায়াত করার জন্য বাইক কিনার কথা ভাবছেন, তারা এটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। কারন সব কিছু বিবেচনায় বাইকটি খুবই ভাল। আমি তিন মাস এই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করে তেমন খারাপ কোন দিক আমার চোখে পড়ে নাই। পরবর্তীতে যদি কোন খারাপ দিক পাই তাহলে আমার পরবর্তী রিভিউ এ সেটি প্রকাশ করব। সবাইকে ধন্যবাদ।

All TVS bike price in bd

TVS Apache RTR 160 SD