সুজুকি জিক্সার এসএফ এফআই এবিএস ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতা মাসুম বিল্লাহ

বাইক চালানো আমার কাছে অনেক দিন ধরেই আবেগের অন্যনাম। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী, তবে যখনই আমার সময় হয় আমি বেরিয়ে পড়ি আমার বাইক নিয়ে। পূর্বে আমার কাছে জিক্সার এসএফ ছিল। কিছুদিন পরে, আমি আমার বাইকটি পরিবর্তন করার কথা ভাবতে শুরু করি। ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ ভি ৩ এ স্যুইচ করব ভেবেছিলাম। অনেক কিছু ভাবার পরে আমি বুঝতে পারি, যেহেতু আমি একজন রেগুলার রাইডার, তাই কম্ফোর্ট এবং অন্যান্য সমস্ত দিকগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তারপর আমার চোখে আসলো সুজুকি গিক্সার এফআই এবিএস বাংলাদেশের বাজারে আসতে চলেছে। এই বাইকটি ভি ৩ এর সাথে তুলনা করে আমি জিক্সার এসএফ ফাই এবিএস কেই প্রাধান্য দেই।কারণ অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কাছে এই বাইকটি স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক হিসাবে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যযুক্ত। ফিচার প্রায় একই, তাই আমি এই বাইকের জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করেছিলাম এবং বাজারে আসার সাথে সাথে কিনে ফেলি। বর্তমানে মিটার কাউন্ট ২৫০০ কিলোমিটার এবং আজ আমি মোটরসাইকেল ভ্যালির মাধ্যমে আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশন রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চলেছি, আসা করি শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন।

আমি এই বাইকের ভাল দিকগুলি দিয়ে শুরু করতে চাই:

- এক কথায় এই বাইকটি "আসাধারন"। বাইকের পার্ফেক্ট স্প্লিট সিটিং পজিশনটি এই বাইকটিকে চালক এবং পিলিয়ন উভয়ের জন্যই আরামদায়ক করে তুলেছে।তার পাশাপাশি,পুরো আউটলুকটি হচ্ছে একটি নতুন ডিজাইনের অঙ্গিকে তৈরী,যা এই বাইকটিকে সত্যই আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কালার, গ্রাফিক্স, ক্রমিংয়ের সামান্য ব্যাবহার সবই দুর্দান্ত মনে হয়েছে আমার কাছে।

- নতুন ডিজাইন এবং থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবারের কারণে, এই বাইকটি নিয়ন্ত্রণ করা যেকোন ধরণের রাস্তায় অনেকটা সহজ এবং স্মুথ বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। আমি কখনই অনুভব করিনি যে আমি বাইকের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি।

- সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস হিসাবে, আমি বলতে পারি যে এই বাইকে রয়েছে নিখুঁত ব্রেকিং কম্বিনেশন। আমি শুধুমাত্র এবিএস ব্রেকিংটিই পছন্দ করিনি, সেই সাথে আমার পিছনের ব্রেকও বেশ পছন্দ হয়েছে এবং ব্যবহার করে মজা পাই। যে কোনও রাস্তার যেকোন পরিস্থিতিতে আমি সহজেই আমার বাইককে থামাতে পারি এই ব্রেকের মাধ্যমে।

- ইলেক্ট্রিকাল ফিচারগুলিও বেশ উন্নত হয়েছে, ব্যাটারি পারফরম্যান্স প্রকৃতপক্ষেই দুর্দান্ত, নতুন মিটার প্যানেলটি আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় লাগে এবং আমি প্রয়োজনীয় সমস্ত ফিচার এখানে খুঁজে পাই। সেই সাথে, নতুন ফ্রন্ট এলইডি হেডল্যাম্প আমাকে খুবই সন্তুষ্ট করেছে। আমাকে রাতেবাইক রাইডের জন্যে এক্সট্রা ফগ লাইটের কথা চিন্তা করতেও হয়না। আমি রাতে রাইড করতেই বেশি পছন্দ করি এবং আমি কখনই আলোর অভাব বোধ করিনি।

- EFiইঞ্জিন সম্পর্কে নতুনভাবে কিছু বলার নেই, তবুও আমি বলব এই ইঞ্জিন আমাকে মনমুগ্ধকর পারফরম্যান্স দিচ্ছে। স্পিড, মাইলেজ, সাউন্ড ইত্যাদি সবকিছুই আমার কাছে নিখুঁত বলে মনে হচ্ছে।

এবার আমি কয়েকটি খারাপ দিক উল্লেখ করতে চাইঃ 

- স্পোর্টসসেগমেন্টের বাইক হিসাবে আমার কাছে মনে হয়েছে বডি প্লাস্টিকগুলি উন্নত করা প্রয়োজন।

- আমি মনে করি এই বাইকটিতে ৬ষ্ঠ গিয়ারের দরকার ছিল।ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স অনুযায়ী এটির প্রয়োজন আমার কাছে মনে হয়েছে।

- বডি প্লাস্টিকগুলি এতটা শক্তিশালী নয়, এমনকি এগুলি অনেক ব্যয়বহুল। সুতরাং, তাদের সুরক্ষিত করার জন্য একটি সাইড বাম্পার প্রয়োজনীয় ছিল, তবে ডিফল্টরূপে সেট করার কোনও উপায় নেই।

- যদিও এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত, তবে আমি মনে করি দামটি কিছুটা বেশি।

আমি এখনও অবধি আমার বাইকটি নিয়ে তেমন কোন লং রাইডে যাইনি, তবে একদিনে ৬৫ কিলোমিটার যাত্রায় এই বাইকটি সম্পর্কে একটি নতুন জ্ঞান আহরন করেছি।সেটি হচ্ছে এই বাইকটি বেশ ভালো ওজন বহন করতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাইকটি যত বেশি ভারী হয় এটি ততটা ভালো চলে। যেমন,একজন পিলিয়ন সহ আমি এই বাইকে থেকে ১২৮ সর্বচ্চ স্পিড পেয়েছি। আমি আশা করছি এই বাইকটি প্রায় ১৩৫-১৪০ এর কাছাকাছি টপ স্পিড দিতে সক্ষম হবেIআমি বাইকের মাইলেজটি কখনই পরীক্ষা করে দেখিনি, কারণ ট্যাঙ্কার সব সময় পরিপূর্ণ থাকে, তবে আমি নির্দিধায় বলতে পারি যে এই বাইকটি আমাকে কমপক্ষে ৪০-৪৫ কিলমিটার/ লিটার মাইলেজ দিচ্ছে আমার ব্যবহার অনুযায়ী।

আপাতত এই ছিল আমার গল্প, আশা করি খুব শীঘ্রই আমার এই বিষ্ট সম্পর্কে আরও কিছু নতুন বিষয় জানতে পারব এবং সেগুলো নিয়ে আবারও আপনাদের সামনে উপস্থিত হব। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।