মোটরসাইকেলের গিয়ার পরিবর্তনের ধরন

মোটরসাইকেলের গিয়ার পরিবর্তনের ধরন

মোটরসাইকেল রাইডিং এর গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ হলো তার গিয়ার। মোটরসাইকেলের গতি কম-বেশি করতে থ্রটলের পাশাপাশি গিয়ারেরও ভুমিকা রয়েছে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মোটরসাইকেলের গিয়ার পরিবর্তনের ধরন। অটোমেটিক গিয়ার সিস্টেম বাদে বাকি সকল মোটরসাইকেলেই স্পীড কম/বেশি করার জন্য ম্যানুয়ালি গিয়ার পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। গিয়ার পরিবর্তনের পদ্ধিতিটি বাইকভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। কোনগুলোর নীচে(সামনে গিয়ার), কোনগুলোর উপরে(পেছনে গিয়ার) এবং কোনগুলোর দুটি মিলিয়েই। কাজেই প্রচলিত গিয়ার পরিবর্তনের ধরনগুলো সম্পর্কে ধারনা না থাকলে কখনও কখনও নতুন বাইক চালাতে সমস্যাতেই পড়তে হয়।








মোটরসাইকেল গিয়ার লিভার
প্রধানত ২ ধরনের গিয়ার লিভার আমরা দেখতে পাই। প্রথমটি সামনে এবং পেছনে দুইদিকেই পা দিয়ে চাপ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। কমিউটার বাইকে এইধরনের লিভার বেশি ব্যবহার হয়। এতে সুবিধা হলো জুতায় কোন দাগ পড়ে না।





অপরটি হলো শুধু সামনে চাপ দেয়া যায় এবং গিয়ার উপরে তুলতে হলে জুতো গিয়ার লিভারের নীচে নিয়ে উপরের দিকে চাপ দিতে হয়। সাধারনত স্পোর্টস বাইকগুলোতে এই ধরনের লিভার বেশি ব্যবহৃত হয়। এতে জুতায় দাগ পড়ে যায়। সাধারনভাবে গিয়ার দেয়া বলতে গিয়ারলিভার উপরে বা নীচে নামানোকে বোঝানো হয়। আমাদের দেশে গিয়ারলিভার নীচে নামানোকে “সামনে গিয়ার” এবং গিয়ার লিভার উপরে তোলাকে “পেছনে গিয়ার” বলা হয়।

“ভেসপা” টাইপ কিছু স্কুটারে বাম হাতে গিয়ার পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকে। এইধরনের ব্যবস্থা সিএনজি থ্রিহুইলারেও দেখতে পাবেন।


সবগুলো নীচে (সামনে গিয়ার)
আমাদের দেশে সবচেয়ে প্রচলিত সিস্টেম এইটা। এর কারন হলো অনেক আগে থেকে আসা জাপানিজ বাইকগুলো এই সিস্টেম থাকতো। গিয়ারগুলো সব নীচে(সামনে)। সবগুলো গিয়ার লিভারের সামনে চেপে দিতে হয়। কমাতে বা নিউট্রাল করতে সবগুলো উপরে বা লিভারের পেছনে চাপতে হবে।

বাজাজ এর সবগুলো কমিউটার বাইক, সুজুকি হায়াতে, সাধারনত চাইনজি এবং জাপানিজ কমিউটার বাইকগুলোতে সবগুলো নীচে অর্থাৎ সামনে গিয়ার।


সবগুলো উপরে (পেছনে গিয়ার)
আমাদের দেশে মুলত ইনডিয়া বাইকগুলোর মধ্যে এই ধরনের গিয়ার সিস্টেম দেখা যায়। ৪ বা ৫টি গিয়ার সবগুলো গিয়ারলিভার উপরে চাপতে হয় বা লিভারের পেছনে চাপতে হয়। গিয়ার কমাতে বা নিউট্রাল করতে সবগুলো সামনে নীচে চাপতে হয়।

ইয়ামাহা স্যালুটো, মাহিন্দ্রা, টিভিএস এবং হিরো এর কমিউটার বাইকগুলোতে সাধারনত সব উপরে অর্থাৎ পেছনে গিয়ার।








১টি নীচে(সামনে গিয়ার) বাকীগুলো উপরে(পেছনে গিয়ার)
পৃথিবীব্যাপী বেশি প্রচলিত এবং নিরাপদ গিয়ার প্যাটার্ন। এই পদ্ধতিতে প্রথম গিয়ারটি সামনে চাপতে হয় এবং বাকিগুলো পেছনে বা গিয়ারলিভার সামনে থেকে উপরে তুলতে হয়। গিয়ার নিউট্রাল করতে প্রথম গিয়ার থাকা অবস্থায় সামনে থেকে সামান্য উপরে চাপতে হয়। উল্লেখ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার কোড অব ফেডারেল রেগুলেশনের ১৯৭৫ এর ধারা ৪৯ অনুযায়ী মোটরসাইকেলের ম্যানুয়াল গিয়ারে গিয়ার শিফটারটি বাইকের বাম পাশে থাকবে। প্রথম গিয়ারটি নীচে(সামনে গিয়ার) এবং বাকিগুলো উপরে(পেছনে গিয়ার) হবে। ট্র্যাক বাইক, অফরোড বাইক এবং যে বাইকগুলো আমেরিকার মার্কেটের জন্য নয়, সেগুলোর জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।

এই পদ্ধতিতে সুবিধা হলো ভুলক্রমে বা চাপ লেগে বা দ্রুত গিয়ার কমাতে গিয়ে বাইক চলন্ত অবস্থায় গিয়ার নিউট্রাল হবে না, যেটি সব নীচে(সামনে গিয়ার) অথবা সব উপরে(পেছনে গিয়ার) এ হয়ে থাকে। অসুবিধা হলো অনেক বাইকারই গিয়ার নিউট্রাল করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।

প্রচলিত প্রায় সকল স্পোর্টস বাইকে এই ধরনের গিয়ার সিস্টেম দেখা যায়।


পরিশেষে
ভিন্ন বাইকে ভিন্ন ধরনের গিয়ার সিস্টেম দেখা যায়। সকল ধরনের গিয়ার সিস্টেমের সাথেই পরিচিত থাকলে প্রয়োজনে বা জরুরী মুহুর্তে বাইক চালাতে সমস্যায় পড়তে হয় না।