সাধারণত ই-বাইক এবং ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেলে লিড এসিড, লিথিয়াম আয়ন ও নিকেল মেটাল হাইড্রাইড ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। তবে প্রচলিত এসব ব্যাটারির পাশাপাশি সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারির সাথে রাইডারদের প্রথম পরিচয় করিয়েছে বিখ্যাত চীনা ই-বাইক ও ই মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান TAILG।
ব্যাটারি যেকোনো ই- বাইক বা মোটরসাইকেলের হৃৎপিণ্ড এবং প্রধান চালিকা শক্তি। একটি ই বাইক/ ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল চলার শক্তি পায় ব্যাটারি থেকে। সাধারণত ই বাইকের মূল উদ্দ্যেশ্য জ্বালানি তেলের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে কার্বন নির্গমন এবং বায়ু দূষণ কমানো। সেই লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন আরো অধিক ইলেকট্রিক শক্তি সঞ্চয়ী, পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করছে। সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারি তার মধ্যে অন্যতম।
১৮০৭ সালে ইংরেজ রসায়নবিদ এবং উদ্ভাবক স্যার হামফ্রি ডেভি সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আবিষ্কার করেছিলেন। এই ব্যাটারি ১৯৮০-এর দশক থেকে প্রচলিত ছিল, তবে ১৯৯০-এর পরবর্তী সময়ে উচ্চ শক্তি ঘনত্ব এবং লিথিয়ামের সরবরাহ হ্রাসের কারণে সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ধীরে ধীরে খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করে।
প্রচলিত ব্যাটারি ও সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারির বিশ্লেষণ
টেলজির উদ্ভাবিত সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তি দীর্ঘ পরিসরে রাইডিংয়ের নিশ্চয়তা,নিম্ন-তাপমাত্রা প্রতিরোধ ক্ষমতা, উচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে। যা বৈদ্যুতিক দুই চাকার যানবাহনে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। লিথিয়াম-আয়ন ও লীড এসিড ব্যাটারি বছরের পর বছর ধরে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করলেও, সোডিয়াম-আয়ন প্রযুক্তি দ্রুত একটি কার্যকর বিকল্প হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে।
প্রকৃতিতে লিথিয়ামের দুষ্প্রাপ্যতা এবং কঠিন মাইনিং প্রক্রিয়া এই ব্যাটারিকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। অন্যদিকে লিড-অ্যাসিড ব্যাটারির ভারী ওজন এবং স্বল্প জীবনচক্র ইলেকট্রিক যানবাহন দীর্ঘ রাইডে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া এই দুই ধরণের ব্যাটারিই উচ্চ তাপমাত্রায় অগ্নিপ্রবণ হওয়ায় সেফটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবেশগত ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি এবং সাশ্রয়ী লং রেঞ্জের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল তৈরিতে TAILG’র ব্যবহৃত সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারি রাইডারদের নিরাপত্তা এবং দীর্ঘ রাইডের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত এই ব্যাটারি টেকনলোজি শূণ্য ডিগ্রি এর নিচের তাপমাত্রায়ও, ২৫ কিমি/ঘণ্টা গতি বজায় রেখে ১১৫ কি.মি চালানো সম্ভব। এছাড়া সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারির লাইফ সাইকেল ২০০০ এর বেশি,যা প্রচলিত লিড-অ্যাসিড ব্যাটারির চেয়ে ৫-৭ গুণ এবং মাইনাস ২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ব্যাটারি এর প্রায় ৯৩ % চার্জ ধরে রাখে। কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (KAIST) এর একটি গবেষণা মতে - একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফুল চার্জ করা সম্ভব।
উচ্চ শক্তি,দ্রুত চার্জিং এবং যেকোনো তাপমাত্রা সহনশীলতা সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে ইলেকট্রিক যানবাহনে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছে। সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি কম বিষাক্ত এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করে, যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমায়। TAILG-এর সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তির প্রবর্তন বৈদ্যুতিক দুই চাকার যানবাহন শিল্পে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে TAILG-এর সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সম্বলিত ইলেকট্রিক বাইক বা স্কুটার এখনও পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এ প্রযুক্তির আগমন যে খুব বেশি দূরের বিষয় নয়, তা বলাই যায়। বৈশ্বিকভাবে যেভাবে এই প্রযুক্তি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং ইলেকট্রিক যানবাহনের চাহিদা বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ই-বাইক বাংলাদেশেও দেখা যাবে বলে আশা করা যায়।
এই প্রযুক্তি দেশে এখনও না এলেও, ইতোমধ্যে আমাদের দেশে TAILG-এর গ্রাফিন ব্যাটারি সম্বলিত ই-বাইক পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাফিন ব্যাটারিও একটি উন্নত প্রযুক্তির সংস্করণ যা দ্রুত চার্জ হয়, দীর্ঘ সময় চলতে পারে এবং প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় অনেক টেকসই। এক কথায় TAILG ব্যবহারকারীদের এমন একটি উন্নত ব্যাটারি অভিজ্ঞতা দিচ্ছে—যা দ্রুত চার্জ, দীর্ঘমেয়াদি পারফরম্যান্স ও কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচের নিশ্চয়তা দেয়।