বাইকের কোন কোন যন্ত্রাংশ দিয়ে ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করতে পারে এবং করণীয়
বর্তমানে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, এমন অবস্থায় বাইকের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গেলে এটি একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি পানি সিলিন্ডারে ঢুকে থাকে। এমন অবস্থায় ইঞ্জিনে হাইড্রোলিক লক (hydrolock) হতে পারে, যা ইঞ্জিনের বড়সড় ক্ষতি করতে পারে। নিচে করণীয় কিছু ধাপ দেওয়া হলোঃ
এ ক্ষেত্রে করণীয়:
1. ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করবেন না:
• যদি নিশ্চিত হন বা সন্দেহ হয় যে পানি ঢুকেছে, মোটেও স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে ইঞ্জিনে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
2. বাইকের ব্যাটারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন:
• যাতে কোনোভাবে স্টার্ট না হয়।
3. স্পার্ক প্লাগ খুলে ফেলুন:
• স্পার্ক প্লাগ খুলে দিলে সিলিন্ডারের ভেতরে কোনো চাপ তৈরি হবে না, ফলে পানি সহজে বের করা যাবে।
4. ইঞ্জিন ম্যানুয়ালি ঘোরানোর চেষ্টা করুন:
• কিক বা হ্যান্ড ক্র্যাঙ্কের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ঘোরান, যাতে সিলিন্ডারের ভেতরের পানি বের হয়ে আসে।
5. ইঞ্জিন ওয়েল চেক করুন:
• যদি ওয়েলের রং দুধের মতো হয়, বুঝবেন তাতে পানি মিশেছে। এই অবস্থায় ওয়েল পরিবর্তন করতে হবে।
6. এয়ার ফিল্টার চেক করুন:
• পানি ঢুকলে এয়ার ফিল্টারও ভিজে যেতে পারে। প্রয়োজনে এটি পরিষ্কার বা পরিবর্তন করুন।
7. কার্বুরেটর বা ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম পরিষ্কার করুন:
• যদি পানি এ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে তবে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
8. মেকানিকের সাহায্য নিন:
• আপনি যদি টেকনিক্যাল না হন, তবে সবসময় একজন দক্ষ মেকানিকের সাহায্য নেওয়াই ভালো।
যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন:
• বারবার স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
• নিজে জানেন না এমন অংশ খুলে ফেলবেন না।
• বাইক চালিয়ে দেখার চেষ্টা করবেন না, যতক্ষণ না নিশ্চিত হোন ইঞ্জিনে কোনো পানি নেই।
বাইকের ইঞ্জিনে পানি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বা পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে, বিশেষ করে যদি বাইক বন্যা, ভারি বৃষ্টি বা পানিতে ডুবে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। নিচে পানি ঢোকার সম্ভাব্য অংশগুলো উল্লেখ করা হলো:
যেসব যন্ত্রাংশ দিয়ে বাইকের ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করতে পারে:
1. এয়ার ইনটেক / এয়ার ফিল্টার বক্স:
• বাইকের ইঞ্জিন বায়ু টানার সময় যদি বাইক পানির নিচে থাকে, তবে পানি এই পথ দিয়ে সোজা সিলিন্ডারের ভেতরে চলে যেতে পারে।
• অনেক সময় বৃষ্টিতে বা পানির ওপর দিয়ে চালানোর সময় ভেজা এয়ার ফিল্টার থেকেও পানি টানতে পারে।
2. এক্সহস্ট পাইপ (Exhaust Pipe):
• বাইক পানিতে পুরোপুরি ডুবে গেলে এক্সহস্ট পাইপ দিয়ে উল্টোভাবে পানি ঢুকে ইঞ্জিনের ভেতরে পৌঁছাতে পারে।
3. স্পার্ক প্লাগ হোল / গ্যাসকেট লিক:
• যদি স্পার্ক প্লাগ সঠিকভাবে ফিট না থাকে বা গ্যাসকেট নষ্ট থাকে, তাহলে সেখান দিয়েও পানি ঢুকতে পারে।
4. কার্বুরেটর বা থ্রটল বডি:
• কার্বুরেটর বা EFI (Electronic Fuel Injection) অংশে যদি পানি ঢুকে, তবে সেটা ইঞ্জিনে মিশে যেতে পারে।
5. ইঞ্জিন ভেন্ট বা ব্রিদার পাইপ:
• ইঞ্জিনের ব্রিদার পাইপ, যা অভ্যন্তরীণ চাপ ব্যালেন্স করতে ব্যবহৃত হয়, সেখান দিয়েও পানি ঢুকতে পারে যদি বাইক পানিতে নিমজ্জিত হয়।
6. অয়েল ফিলার ক্যাপ:
• যদি অয়েল ফিলার ক্যাপ ভালোভাবে বন্ধ না থাকে বা সেখানে ফাঁক থাকে, তাহলে পানি ঢুকতে পারে এবং ইঞ্জিন অয়েলের সাথে মিশে যেতে পারে।
বাইকের কোন অবস্থায় পানি প্রবেশ করার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি:
• পানি অতিক্রম করার সময় যদি পানি বাইকের এয়ার ইনটেক লেভেলের উপরে উঠে যায়
• যদি বাইক পড়ে গিয়ে এক্সহস্ট বা এয়ার ইনটেক পানিতে ডুবে যায়
• বৃষ্টির মধ্যে বাইক স্টার্ট রেখে রাখা
• গ্যারেজে বাইক রাখার সময় নিচু জায়গায় পানি জমে যাওয়া
উপরের উল্লেখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি বাইকের ইঞ্জিনে পানি প্রবেশের থেকে রক্ষা পেতে পারেন, এছাড়া যদি আপনি বন্যা কবলিত এলাকায় বসবাস করে থাকেন তবে বাইক উঁচু স্থানে রাখা আপনার জন্য ভালো হবে এবং ভারী বৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার মধ্যে বাইক নিয়ে বের না হওয়ায় ভালো।