যে কারণে প্রতি তিন-চার বছর পরপর টায়ার পরিবর্তন করা প্রয়োজন:
টায়ার একটি বাইকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একটি। এটি বাইকের একমাত্র অংশ যেটি রাস্তাকে সরাসরি স্পর্শ করে থাকে। নিন্মমানের বা ত্রুটিপূর্ণ টায়ার এক্সিডেন্ট ঘটার অন্যতম প্রধান কারণগুলোর একটি। যদিও বেশিরভাগ বাইকাররা টায়ারের ব্যাপারে ততোটা সচেতন নন; তবুও একজন স্মার্ট রাইডারের উচিত যেকোন জার্নি করার আগে বাইকের টায়ারটি একবার দেখে নেওয়া।
প্রতিটি জিনিসের মতো টায়ারেরও একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। আপনি নিয়মিত অথবা ক্যাজুয়াল রাইডার যেইটিই হোননা কেন একটা সময়ের পর টায়ার তার কার্যকারিতা হারাবে। তখন টায়ার পরিবর্তন করাই একমাত্র পথ। টায়ার পরিবর্তন করার আগে টায়ার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা দরকার।
আপনার বাইকে কি ধরনের টায়ার ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা আগে জানুন:প্রথম যে জিনিসটি খেয়াল করতে হবে তাহলো আপনার বাইকে কি ধরনের টায়ার দরকার। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের টায়ার পাওয়া যায়। প্রধানত টায়ারকে দুই ক্যাটাগরীতে ভাগ করা হয়। যথা:
১)টিউবলেস টায়ার:টিউবলেস টায়ার টিউব টাইপ টায়ারের মতোই তৈরী করা হয়। তবে পার্থক্য হলো এখানে কোন ইনার টিউব থাকেনা। এখানে প্রেশারাইজড এয়ার হুইল রিম এবং টায়ারের মধ্যে থাকে। টায়ারে কোন পাংচার হলে এজন্য বাতাস ধীরে ধীরে বের হয়। তখন কন্ট্রোল ঠিক রাখতেও বেগ পেতে হয়না। এটি তুলনামূলক হালকা এজন্য ফুয়েল কনজাম্পশন কম, এর দাম একটু বেশী এবং টিউব টাইপ টায়ারের চেয়ে অনেক কমফোর্টেবল।
২)টিউব টাইপ টায়ার:টিউব টাইপ টায়ার পূর্বে বেশি ব্যবহার করা হতো। এই টায়ারে একটি ভালভ থাকে যাতে বাতাস আটকে থাকে। এই টায়ারে পাংচার হলে বড় একটি হোল তৈরি হয়। যার কারণে বাতাস অতি দ্রুত বের হয়ে যায়, ফলে বাইকটি কন্ট্রোল হারায়। এটি টিউবলেস টায়ার থেকে ভারী। এর দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং এটি বেশি ফুয়েল কনজাম্প করে।
আপনার টায়ারের বয়স জানুন:আপনার টায়ারের ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট জানতে টায়ারের সাইডওয়ালে চার ডিজিটের ডট কোড খুঁজে বের করুন।
চার ডিজিটের নম্বরটির প্রথম দুই ডিজিটে সপ্তাহ বোঝায় আর পরের দুই ডিজিট সাল নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ কোন টায়ারের ডট কোড ৩৫০৭ হলে বোঝা যায় টায়ারটি ২০০৭ সালের ৩৫ তম সপ্তাহে ম্যানুফ্যাকচার করা হয়েছে।
এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো যার জন্য আপনার টায়ার প্রতি তিন-চার বছর পরপর টায়ার পরিবর্তন করতে হবে।
টায়ার বারবার পাংচার হয়ে যেতে পারে:প্রতিটি টায়ার এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে অনেক স্ট্রেস সহ্য করতে পারে। কিন্তু ব্যবহারের সাথে সাথে বিভিন্ন কারণে টায়ার পাংচার হয়ে যেতে পারে। গরম তাপমাত্রা, রাস্তায় থাকা ধারালো জিনিস এগুলোর কারণে যেকোন টায়ারেরই ক্ষতি হতে পারে। টায়ারের ভিতরের অংশে কিছু হলে টায়ার তখনই চেন্জ করতে হবে।
তিন-চার বছর পর টায়ার তার কর্মক্ষমতা হারায়:বিভিন্ন বিষয়ের কারণে টায়ার তার কর্মক্ষমতা হারায়। যেমন: আবহাওয়া, প্রতিনিয়ত ব্যবহার, খারাপ রাস্তা, ওভারলোডিং, বেশী স্পিডে সবসময় চালানো, মেইনটেন্যান্স, চালানোর ধরন ইত্যাদি। এসব ফ্যাক্টরগুলোর কারণে সহজে বলা সম্ভব নয় টায়ার ঠিক কতদিন কর্মক্ষম থাকবে। এজন্য এক্সপার্টরা প্রতি তিন-চার বছর পরপর টায়ার পরিবর্তন করতে সাজেস্ট করে থাকেন যাতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
টায়ারের লিগ্যাল ট্রেড ওয়্যার লিমিট অতিক্রম হয়ে যায়:প্রতিটি টায়ারেরই লিগ্যাল ট্রেড ওয়্যার লিমিট থাকে। টায়ারের বিটসের গভীরতাকেই ট্রেড ওয়্যার লিমিট বলা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে একিই টায়ার চালাতে থাকলে লিমিট ক্রস করার সম্ভাবনা থাকে। সর্বনিম্ন ট্রেড ওয়্যার লিমিট ১ মি.মি এর কাছাকাছি আসার আগেই টায়ার পরিবর্তন করা দরকার।
কারণ এই লিমিট ক্রস করলে গ্রিপ এবং কন্ট্রোলিং করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অতিসত্বর টায়ার পরিবর্তন করা উচিত।
সময়ের সাথে টায়ারের ক্ষয় হয়:কংক্রিটের রোডে বিভিন্ন জিনিস পড়ে থাকে যার জন্য টায়ারের ক্ষয় হয়। ব্যবহার করা হোক বা না হোক, সময়ের সাথে সাথে টায়ারের ক্ষয় হয় হবেই। যেকোন ছোটখাটো ত্রুটি বা ক্ষয়ই বড় রুপ ধারণ করতে পারে। এজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে কখনো ত্রুটিপূর্ণ টায়ার থাকলে তা না সারিয়ে বাইক চালানো উচিত নয়।
বাইকের পূর্ণ পারফরম্যান্স উপভোগ করতে টায়ার পরিবর্তন করুন:পুরানো টায়ারের কারণে বাইক কন্ট্রোল এবং গ্রিপ করতে সমস্যা হয়। পুরানো টায়ারে বাইক চালালে ফুয়েল কনজাম্পশনও বেশি হয়। এজন্য সময়ের সাথে টায়ার পাল্টালে বাইকের ইন্জিনের অপ্টিমাল পারফরম্যান্স উপভোগ করা যায়।
সুতরাং উপরের কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, প্রতি তিন-চার বছর পরপর টায়ার পরিবর্তন করা উত্তম। আপনার এবং আপনার বাইকের নিরাপত্তার স্বার্থে এই বিষয়ে কৃপণতা করা উচিত নয়। আপনার অজ্ঞতা আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে । তাই টায়ারের অবস্থার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।