টায়ারের কারনে কি বাইকের মাইলেজ কমে?
বর্তমান সময়ে অনেকের মাঝেই একটি প্রশ্ন চলে আসে বাইকের টায়ার ভারি হলে অথবা সাইজ একটু পরিবর্তন করে মোটা চাকা লাগালে মাইলেজ ড্রপ করে কিনা? হ্যা কমে, তবে খুবই সামান্য। বাইকের চাকা মাইলেজ ড্রপের ক্ষেত্রে ৫% এর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না।
স্বাভাবিক ভাবেই আপনি স্টক টায়ারের থেকে কিছুটা মোটা বা অফ রোড টাইপ বেশি রাবার কম্পাউন্ডের টায়ার ব্যবহার করলে বাইকের মাইলেজ কিছুটা ড্রপ করবে।
কিন্তু আপনাকে জানতে হবে আসলে কোন কোন বিষয়ের কারনে বাইকের মাইলেজ বাকি ৯৫% ড্রপ করে, শুধুই কি টায়ার বড় কারন? চলুন কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক যার কারনে বাইকের মাইলেজ ড্রপ করে। এতে করে আমাদের কিছু ভূল ধারনাও ভেঙ্গে যাবে বলে আসা করা যায়।
১। বাইকের ইঞ্জিন কন্ডিশনঃ
বাইকের ইঞ্জিন মুলত পেট্রোল কিংবা অকটেন দিয়ে চলে, চাকা কিংবা পুরো চ্যাসিস অথবা অন্যান্য যেকোন ফিটমেন্ট কিন্তু তেল নিয়ে থাকে না। ইঞ্জিন শক্তি দিয়েই টেনে নিতে হয় সকল পার্টস। সুতরাং ইঞ্জিনের ক্ষমতা, টিউনিং, সিসি রেঞ্জ, পিক-আপ রেস্পন্স এসব কিছুর উপর নির্ভর করে আপনার বাইকের মাইলেজ। ইঞ্জিনের গিয়ার শিফটিং ঠিক আছে কিনা এর উপরেও আপনার বাইকের মাইলেজ নির্ভর করে। আর এই কারনেই হাই সিসি কিংবা শক্তিশালী ইঞ্জিন বাইকের মাইলেজ অনেকটাই কম। শক্তি উৎপাদন করতে মানুষের যেমন খাবার লাগে ইঞ্জিনেরও তেমন বেশি ফুয়েল দরকার পড়ে। ইঞ্জিন কন্ডিশনটাও অনেকটা ম্যাটার করে, তার কারন, ইঞ্জিন অয়েল সময়ে সময়ে পরিবর্তন এবং ইঞ্জিনের কন্ডিশন ঠিক ঠাক না থাকলে ইঞ্জিন সিস্টেম ভাল থাকে না। এতে করে কার্বোরেটরে বা এফআই সেনসরে তেল ঠিক ঠাক প্রবাহ এবং ইন্টারলান প্রসেস করতে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখিন হয়ে থাকে। যার ফলে মাইলেজ ড্রপ করে।
২। রাইডিং স্টাইল এবং রাইডারঃ
বাইকের মাইলেজ একজন রাইডারের স্কিল, রাইডিং টাইপ এবং মেইনটেনেন্সের উপরে অনেকটা নির্ভর করে। একজন রাইডার কতটা ব্রেকিং ব্যাবহার করছে, কতটা ঘনঘন ব্যাহার করছে, ক্লাচ কিভাবে এবং কতবার প্রেস করছেন, নরমান স্পীডে বাইক রাখছেন নাকি অনেক দ্রূত কিংবা ধীর গতিতে চালাচ্ছেন, বাইকের সার্ভিসিং ঠিকঠাক করছেন কিনা, কতটা ভাল মানের ইঞ্জিন অয়েল এবং ফুয়েল ব্যাবহার করছেন এগুলো সবকিছুই বাইকের পারফর্মেন্স এবং মাইলেজ নির্ধারন করে দেয়। বর্তমান সময়ে বাইকে দেখবেন ইকো মোড, স্পোর্টস মোড এই ধরনের একটা বিষয় উল্লেখ থাকে, আগের বাইকগুলোতে এগুলো না থাকলেও বিষয়গুলো ঠিক একইভাবে কাজ করত। একজন রাইডার যখন ৫০-৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পীডে, বেশি ব্রেক বা ক্লাচ প্রেস না করে চলতে থাকে সেটি ইকো মোডের অধিনে পড়ে, এই সময় বাইকের মাইলেজ বেশ ভাল থাকে। কিন্তু আপনি যদি সবসময় হাই স্পীড, হঠাৎ ব্রেকিং এগুলোর উপর বেশি অভ্যস্থ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বাইকের মাইলেজ কিছুটা ড্রপ করবে এটাই স্বাভাবিক।
৩। বাইকে কতটা ওজন বহন করছেন?
আপনি সিঙ্গেল রাইড করছেন নাকি পিলিয়ন সহ? সাথে কি ভারি অনেককিছু বহন করছেন? পিলিয়ন ১ জন নাকি ২ জন? এই সকল বিষয় বাইকের স্পীড এবং মাইলেজ কমিয়ে আনে। এর কারন টায়ার কিংবা বাইকের লোড ক্যাপাসিটি থাকে, এর বেশি বহন করলে ইঞ্জিনে প্রেসার পড়ে, টায়ার ট্র্যাকশন বেড়ে যায়, যার ফলে মাইলেজ ড্রপ করে, নিজে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
৪। রাস্তার অবস্থা কি?
আপনি কেমন রাস্তায়, কতটা ওজন নিয়ে এবং ইঞ্জিনের কি কন্ডিশনে বাইক রাইড করছেন এগুলর উপর মাইলেজ অনেকটা নির্ভর করে। ভাঙ্গা রাস্তায় কিংবা পাহাড়ি রাস্তায় বাইকের মাইলেজ একরকম আবার হাইওয়ে কিংবা শহরের রাস্তায় তা আরেকরকম। বেশিবার ক্লাচ বা ব্রেক প্রেসিং, বার বার স্পীড এবং গিয়ার পরিবর্তন বাইকের মাইলেজ কম বেশি করে থাকে যা রাস্তার কন্ডিশনের উপর অনেকটা নির্ভর করে।
৫। বাইকের চাকাঃ
সবশেষে চলে আসে বাইকের চাকা। এর কারন, চাকাকে ঘুরতে সাহায্য করে ইঞ্জিন, চাকা নিজে নিজে ঘুরে না। আপনি যদি স্বভাবিকভাবেই স্টক টায়ারের বদলে মোটা চাকা লাগান, বেটার গ্রিপের জন্য বেশি রাবার কম্পাউন্ডের বা স্টীল বেল্টের রেডিয়াল টায়ার ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই আপনার মাইলেজ কিছুটা কমে যাবে। তবে উপরের বিষগুলো যদি সব ঠিক থাকে এবং যেটা যেইভাবে থাকা উচিৎ সেইভাবেই থাকে তাহলে মাইলেজ যতটুকু ড্রপ করবে তা আপনি বাইকের এবং চাকার পারফর্মেন্সের কারনে ভুলেই যাবেন।
যেকোন বাইক তৈরীর সময় তা একটি স্ট্যান্ডার্ড কন্ডিশনে চেক করা হয়, এবং মাইলেজ ও স্পীড টেস্ট সেইভাবেই হয়ে থাকে। সুতরাং উপরে উল্লেখিত প্রথম চারটি বিষয় ভুলে গিয়ে টায়ারের কারনে মাইলেজ অনেকটা ড্রপ করে এটা ভাবার কোন কারন নেই। তাহলে কোম্পানি থেকে বলা হত ‘এই ব্র্যান্ডের টায়ার ব্যাবহার করলে আপনার বাইকের মাইলেজ বাড়বে” হোক সেটা MRF, Pirelli অথবা Timsun ইত্যাদি। আলোচিত সকল বিষয় ইন্টারনেটে সার্চ করে কিংবা নিজে পরীক্ষা করে সত্যমিথ্যা যাচাই করে নিতে পারেন।
ধন্যবাদ।