আপনি কি একজন বাইকার? যদি হ্যাঁ হয় তাহলে হেলমেট আপনার জন্য একটি অপরিহার্য এক্সেসরিস। এই হেড গিয়ার আপনার মাথা সুরক্ষিত রাখে, এবং রাইডের সময় আপনাকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে, আমাদের ব্যাবহার করা হেলমেটগুলি স্টাইলিশ, আরও বেশি আরামদায়ক এবং আপনার মাথায় বহন করার জন্য বেশ সহজ হয়ে উঠছে। সেই সাথে আমাদের রাইডিংকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য প্রযুক্তিগতভাবেও উন্নত হচ্ছে। আজকে থেকে ১০ বছর আগেও ব্লুটুথ সংযোগসহ একটি মোটরসাইকেল হেলমেট কেনা খুব একটা দেখা যায়নি বলা যায়। কিন্তু এখন বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি আপনার ক্যানেকটিভিটি এবং চলতি পথে নিরাপদ থাকার গুরুত্ব বোঝে। যার ফলে, বিভিন্ন গ্যাজেট এবং ডিভাইসগুলি আপনার হেলমেটে অতিরিক্ত হিসাবে যুক্ত হচ্ছে।
এখন আমরা স্মার্ট যুগে বাস করছি, তাই সবকিছুই স্মার্ট হয়ে উঠছে। সেই প্রবণতা অনুসরণ করে স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেটের প্রচলন শুরু হয়েছে বেশ জোরালো ভাবেই এবং চমৎকার যোগাযোগ ও বিনোদনের সরঞ্জামে পরিণত করেছে আমাদের হেলমেটগুলোকে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিভিন্ন হেলমেটের কোম্পানিগুলো আমাদের নিরাপদ রাখতে ধীরে ধীরে উন্নত প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। ফলে আমরা আমাদের হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছি স্মার্ট হেলমেট।
স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেট কি?
আমরা যখনই স্মার্ট বলছি, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এগুলো কোনো সাধারণ হেলমেট নয়। এটির নামই বলে দিচ্ছে হেলমেটটি স্মার্ট কার্যক্ষমতা সম্পন্ন। মোটরবাইক চালানোর সময় এটি ব্যবহারকারীকে শুধুমাত্র হাই লেভেল নিরাপত্তাই দেয় না বরং তাদের ফোনে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেসও দেয়। এই হেলমেটগুলর উদ্দেশ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আশেপাশের তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রদান করা এবং ব্যবহারকারীকে তার ভয়েসের মাধ্যমে ফোন অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়া।
গতানুগতিকভাবে সঙ্গায়িত করলে, “স্মার্ট হেলমেট হল এমন একটি হেলমেট যার মধ্যে কিছু হার্ডওয়্যার ইনস্টল করা হয়ে থাকে যা একজন রাইডারকে নিরাপদ এবং টেকনোলজির বেশ ভাল ব্যাবহার করার মাধ্যমে রাইডিং এর সর্বচ্চ মজা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে”। এতে ব্লুটুথের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের সাথে সংযোগ করে কল করা থেকে শুরু করে, মিউজিক কন্ট্রোল,অটোমেটিক ভাইজর , ভেন্ট, স্ট্র্যাপ এবং আরও অনেক কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত করার ব্যাবস্থা থাকে। এছাড়াও, থাকতে পারে হেড আপ ডিসপ্লে। এক কথায় হেলমেটের যাবতীয় ফিচারস এডভ্যান্সড এবং ক্যানেক্টেড ইন ওয়ান স্টপ।
স্মার্ট হেলমেট সম্পর্কে আরও কিছু কথাঃ
প্রথম দিকে স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেটের বাজার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় জর্জরিত ছিল বলা চলে। বিভিন্ন কোম্পানি অনেক দিন ধরে এই বাজারকে বড় করার চেষ্টা করছে, কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা অসন্তুষ্ট পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। আজকাল এই স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেটগুলি তুলনামূলকভাবে বেশ ভালই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা এটিকে নতুনভাবে বিবেচনা করতে পারি, তবে যেহেতু নতুন তাই সঠিকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়নি এই সেক্টরকে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, একটি স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেট আপনার মাথার সুরক্ষার সাথে আরও বেশি কিছু নিশ্চিত করবে। এতে সাধারণত ইন্টিগ্রেটেড স্পিকার/হেডফোন, মাইক্রোফোন এবং সকল যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো বৈশিষ্ট্য যুক্ত থাকবেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত হবে এবং আপনাকে ফুল এক্সেস দিবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো এই স্মার্ট হেলমেটকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। নির্মাতারা চেষ্টা করছেন এবং কেউ কেউ ইতিমধ্যে হেলমেটে রিয়ারভিউ সিস্টেম স্থাপন করেছে, কিছু এমনকি হেড-আপ ডিসপ্লে সংযোগ করেছে, যদিও এটি সত্যিই খুব বিরল। অন্যান্য দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে ক্যামেরা, ভয়েস নিয়ন্ত্রণ, নেভিগেশন এবং এমনকি জরুরী এসওএস ফিচারস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। একটি স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেটের বৈশিষ্ট্যগুলি তার বিশেষত্তের উপর, মার্কেটে অবস্থান অর্থাৎ কোন জোনে ব্যাবহার হবে এবং প্রস্তুতকারক কোম্পানির পলিসির উপর নির্ভর করে।
স্মার্ট হেলমেট আমাদের কতটুকু প্রয়োজন?
একটি স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেট ব্যাবহার করার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, আমরা জানি বাইক রাইডিং বাইকারদের কাছে খুবই আনন্দদায়ক, কিন্তু আপনি যদি রাইডিংএর সময় কোনরকম ক্ষতির আশঙ্কা ছাড়া মিউজিক শুনতে পান, তাহলে সেটা আরও উপভোগ্য রাইড, কি তাই না! তাই স্মার্ট হেলমেটগুলি ব্যবহারের সাহায্য পুরো যাত্রাটিকে আরও আনন্দদায়ক করা সম্ভব। অনেকেই বলবে এটাতো সাধারন ডিভাইস লাগিয়েই করা সম্ভব, তাহলে স্মার্ট হেলমেট কি দরকার? আসলে স্মার্ট হেলমেট আপনার চাহিদা অনিযাইয়ী কাজ করবে, কিন্তু সেই সাথে এটিও নিশিত করবে যেন আপনি গান শুনতে গিয়ে না ফেরার দেশে না চলে না। অনেকসময় আমরা অন্যমনোস্ক হয়ে পড়ি রাস্তায়। কিন্তু স্মার্ত হেলমেট আপনার চারিদিকে খেয়াল রাখে এবং সেন্সরে আপনি নটিফিকেশন পাবেন যে আপনার আসেপাসে কি হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, আমরা এখন কমিউনিকেটর ইনস্টল করছি কারণ কখনও কখনও রাইড করার সময় অন্যান্য রাইডারদের সাথে যোগাযোগ করা বা কল করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, তাই কাজের এই অংশটি স্মার্ট হেলমেটগুলির সাথে আরও সুবিধাজনক হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন একটি গ্রুপ রাইড হয়। ভয়েস কন্ট্রোল সব কমিউনিকেটরে থাকে না, থাকলে অনেক দামি হয়ে থাকে। কিন্তু স্মার্ট হেলমেটে এই সুবিধা বিল্ট-ইন থাকে।
অবশেষে, বিনোদন এবং যোগাযোগের ব্যাপার ছাড়াও, ভয়েস কমান্ডের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং বৈশিষ্ট্যগুলি রাস্তায় চলার সময় নিজে থেকেই দিকনির্দেশ দিতে পারে এবং দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। এছাড়াও কয়েকটি মডেলের ক্যামেরা রয়েছে এবং দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ফুটেজ সরবরাহ করতে পারে। এর পাসাপাসি, কিছু হেলমেট এসওএস ফিচার, দৃশ্যমান থাকার জন্য এক্সট্রা আলো এবং এমনকি রিয়ারভিউ ক্যামেরা অফার করে। সামগ্রিকভাবে, আমরা বলতে পারি স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেট খুব ভালভাবে আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।
শেষ কথাঃ
সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যোগাযোগ করা এবং বিনোদন ব্যাবস্থাই শুধুমাত্র স্মার্ট হেলমেটের উদ্দেশ্য নয়। এমনকি এগুলো স্মার্ট মোটরসাইকেল হেলমেট কেনার আসল কারণও নয়। বাস্তবে, এই হেলমেটগুলি অনেক বেশি নিরাপদ, এবং সেই সাথে বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির ব্যাবহার এখানে হয়ে থাকে। এই কারণেই স্মার্ট হেলমেটের বাজার দ্রুত বাড়ছে এবং বিভিন্ন কোম্পানি যেমন, Harley Davidson, SENA, Crosshelmet, Jarvish, SHOEI এবং অন্যান্য অনেক নির্মাতারা আমাদের ভবিষ্যৎ রাইডগুলিকে আরও সুবিধাজনক এবং নিরাপদ করার জন্য তাদের নিজস্ব স্মার্ট হেলমেট তৈরি করার দৌড়ে নেমে পড়েছে।
Total view: 1021