বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চলা যানের মধ্যে মোটরসাইকেল হলো অন্যতম যার পরিমান দাড় করাতে গেলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় আনুমানিক ৩৭ লাখ যাদের প্রত্যেকের ওপর হেলমেট ব্যবহার আইনত অপরিহার্য, ব্যবহারও করেন প্রায় সবাই কিন্তু দেখা যায় খুব সাধারন দুর্ঘঠনতেও সেইসব হেলমেট বাইকারদের সুরক্ষা দিতে অক্ষম।
সংশ্লিষ্ঠ মহল থেকে বলা হচ্ছে বাইকাররা যদি মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার করেন তাহলে দুর্ঘঠনার শীকার হউয়া অধিকাংশ বাইকার প্রানহানী এবং গুরুতর আহত হউয়া থেকে নিজেকে সুরক্ষা দিতে পারবেন বেশ ভালভাবেই।
মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারের ওপর নীতিমালা তৈরির জন্যে গত সোমবার (৪ জুলাই) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সদর দপ্তরে এ বিষয়ক নীতিমালা সংক্রান্ত একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আমলা, পুলিশ ও সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাসহ সব স্টেকহোল্ডাররা এই কর্মশালায় অংশ নেন।
ব্র্যাকের পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) আহমেদ নাজমুল হুসাইন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কর্মশালা থেকে পাওয়া সব পরামর্শকে একত্রিত করে এ বিষয়ক নীতিমালা সংক্রান্ত একটি কাঠামো তৈরি করা হবে। অবিলম্বে আমরা সেটি সরকারের কাছে জমা দেবো।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নীতিমালায় বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের মানসম্পন্ন হেলমেটের সুপারিশ করেছি, যা খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়।”
বলা বাহুল্য যে বাংলাদেশের ৯০% ভাগেরও বেশি বাইকার শুধুমাত্র লোক দেখানো বা ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্যে হেলমেট ব্যবহার করেন। যেগুলা দামে সস্তা আর সুরক্ষার দিক দিয়ে কোনভাবেই মানসম্পন্ন নয়। সাধারনত এইসব নিম্নমানের হেলমেটের দাম হলো ৫০০-৬০০ টাকা কিন্তু খসড়া নীতিমালায় নুন্যতম মানসম্পন্ন হেলমেটের দাম হলো ১১০০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মাত্র ১০% মোটরসাইকেল চালক এবং যাত্রীর আসনে থাকা ২% আরোহী মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করেন।
বুয়েটের এআরআই-এর পরিচালক অধ্যাপক জনাব হাদিউজ্জামান বলেন, “একটি মানসম্পন্ন হেলমেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০% কমিয়ে দিতে সক্ষম।”
এআরআই এর তথ্য অনুসারে, মোটরসাইকেল দুর্ঘঠনার প্রায় ৭% ঢাকায় এবং ৯৩% ঢাকার বাইরে ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই এসব দুর্ঘটনায় শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় মৃত্যু ও হতাহতের সংখ্যা বেশি কারন সেইসিওব এলাকায় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেশি এবং হেলমেটের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা ছাড়াই।
রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১,১৬৮ জনের মৃত্যু হয়, যা ২০২০ সালে ছিল ১,০৯৭ জন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে সারাদেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি থাকে। আর তখন অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি হয়।
রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যাক্ট ২০১৮ আইনে বলা হয়েছে যে, চালক এবং যাত্রীকে সঠিকভাবে হেলমেট পরিধান করতে হবে কিন্তু এই “সঠিক” এর পরিপূর্ণ কোন ব্যাখ্যা নেই। এইবার এই নতুন নীতিমালায় হেলমেটের সঠিক ব্যবহার এবং কার্যকর করার প্রক্রিয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
উল্লেখ্য যে বিশ্বের প্রতিটা উন্নত দেশের পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশসমুহ ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের নিজস্ব হেলমেট পরীক্ষাগার থাকার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি তিনি বলেন, “নিম্নমানের হেলমেটের আমদানি রোধে বিএসটিআই-এর একটি হেলমেট টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করার সময় হয়েছে কারণ একটি মানসম্পন্ন হেলমেট মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে।”
সংশ্লিষ্ঠ এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকারি পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএসটিআই বেসরকারি পরীক্ষাগারে হেলমেটের মান পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Total view: 959