ভারতের বাইরে প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল প্রস্তুত করার কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হিরো মোটোকরপোরেশন লিমিটেড। আর সেই কারখানা হচ্ছে বাংলাদেশে। এ কাজে অংশীদার হিসেবে থাকছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান নিটোল-নিলয় গ্রুপ।
এ দেশে মোটরসাইকেল প্রস্তুতের কারখানাটির জন্য আগামী পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হবে চার কোটি ডলার। এর ৫৫ শতাংশ দেবে হিরো। বাকিটা দেবে নিটোল-নিলয়। প্রাথমিকভাবে এখন বিনিয়োগ করা হবে এক কোটি ২৬ লাখ ডলার।
আগামী অর্থবছরের প্রথমার্ধ থেকেই শুরু হবে কারখানা তৈরির কাজ। কারখানাটি হবে যশোরে। সেখানে বছরে তৈরি হবে দেড় লাখ মোটরসাইকেল। আর মোটরসাইকেল প্রস্তুতের শুরুর বছরেই বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজারের ২০ শতাংশ দখল করতে চায় হিরো।
হিরো মোটোকরপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী পবন মুনজাল এসব তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান তিনি।
ওই হোটেলেই গতকাল দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই হয়। এতে সই করেন পবন মুনজাল এবং নিটোল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পবন মুনজাল বলেন, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে এক কোটি ২০ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রির রূপকল্প রয়েছে হিরোর। আর এ বিক্রির ১০ শতাংশ হবে ভারতের বাইরে। বাংলাদেশও এর মধ্যে আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে কারখানা হচ্ছে তাতে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশের গ্রাহকদের হিরোর সব মোটরসাইকেলে পাঁচ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা (ওয়ারেন্টি) দেওয়া হবে।
মুনজাল বলেন, ‘যৌথ বিনিয়োগে যে প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হবে তার নাম এখনো ঠিক হয়নি। তবে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বাজারজাত হবে ‘হিরো’ ব্র্যান্ড নামে।’ তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এ দেশীয় বাজার ধরাই কারখানা স্থাপনের উদ্দেশ্য। পরবর্তী সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এখান থেকে মোটরসাইকেল রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।
আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এ দেশে মোটরসাইকেল ও মোটরগাড়িসংক্রান্ত নীতিমালা ত্রুটিপূর্ণ। সে কারণে এ ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প গড়ে উঠছে না। মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ উৎপাদনকে উৎসাহী না করলে এ দেশে মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী শিল্প গড়ে উঠবে না। যন্ত্রাংশ উৎপাদনকে উৎসাহী করতে নীতিমালার সংশোধন করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের অতিথি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিজস্ব ব্র্যান্ডের যানবাহন উৎপাদনের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। আমরা চাই, দেশের জনগণ “মেড ইন বাংলাদেশ” লেখা যানবাহন ব্যবহার করুক।’ এ ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোক্তা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন, তাঁদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাইকমিশার সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যপূর্ণ নয়। এটা দূর করতে হয় এ দেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, না হলে ভারতে রপ্তানি বাড়াতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা সীমিত, তাই বিনিয়োগ-সম্পর্কিত বাণিজ্য বাড়ানো এ ক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় হিরো এবং জাপানি প্রতিষ্ঠান হোন্ডা যৌথ উদ্যোগে আগে মোটরসাইকেল তৈরি করে ‘হিরো হোন্ডা’ ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করত। তবে ২০১১ সালে হোন্ডার সঙ্গে হিরোর সম্পর্ক শেষ হয়। এর পর থেকেই এককভাবে মোটরসাইকেল তৈরি করছে হিরো। গত বছর হিরোর ৬২ লাখ ৫০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৮টি দেশের হিরোর মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে।